![]() |
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান |
বাংলাদেশের
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মাসের
বিশ দিনই হেলিকপ্টারে চড়ে
ঢাকার বাইরে দেশের প্রত্যন্ত
অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন।
দেশকে সম্ভব খুব অল্প
সময়ের মধ্যে স্বনির্ভর করে
গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবামূলক
কাজে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি
প্রায়ই জনগণের কাছে যেতেন। খাল
খনন, কূপ খনন, সেচ
কার্যক্রম ইত্যাদি কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে
জনগণের মতামত জানতে গিয়ে
প্রশাসনকে অনেক বিব্রতকর অবস্থায়
ফেলে দিতেন। এতে
জনগণের সহজ অনুভূতিকে কাজে
লাগিয়ে দ্রুত উন্নয়নের দিকে
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
জনসংখ্যা
নিয়ন্ত্রণের ওপর তিনি সর্বাধিক
গুরুত্ব আরোপ করেন।
দুটোর বেশি সন্তান নয়,
এই স্লোগান তিনি জনগণের ঘরে
ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কার্যকর
পন্থা গ্রহণ করেন।
পঁয়তাল্লিশ
বছর বয়স্ক সৈনিক জিয়া
দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে
মুক্ত করার জন্য বদ্ধপরিকর
ছিলেন। যদিও
এ কাজটি করা অত্যন্ত
কঠিন ছিল, তবুও তিনি
বিদেশী সাহায্যদাতা দেশগুলোকে এ কথা বোঝাতে
সক্ষম হয়েছিলেন, তার দৃঢ় এবং
বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশকে সহজেই স্বল্পসময়ে
স্বনির্ভর করা সম্ভব।
জিয়ার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত মাঝে মধ্যে পরিকল্পনায়
ব্যাঘাত সৃষ্টি করত।
এক রেল ভ্রমণে রাষ্ট্রপতি
জিয়া যেসব প্রতিশ্রুতির ঘোষণা
দেন তা বাস্তবায়ন করতে
গিয়ে রেলসংক্রান্ত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
এ সম্পর্কে জনৈক পরিকল্পনাবিদ বলেছেন,
পরিকল্পনার তুলনায় প্রতিশ্রুতি খুব
ভালো না হলেও যথেষ্ট
উপযোগী এবং ভালো।
দারিদ্র
এবং উচ্চ জন্মহার ছাড়াও
বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বাধা দুর্নীতি। রাষ্ট্রপতি
জিয়া ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন বলে জনশ্রুতি
আছে। পরীক্ষিত,
সৎ, ত্যাগী এবং পরিশ্রমী
ব্যক্তি হিসেবে যখন জিয়ার
সুখ্যাতি চার দিকে ছড়িয়ে
পড়ল তখন তার বিরুদ্ধবাদীরা
বলতে লাগল জিয়ার প্রকল্প
থেকে শুধু ভূমি মালিকরাই
উপকৃত হচ্ছে। অন্যরা
হচ্ছে উপেক্ষিত। তারা
আরো বলল, গত দশ
বছরে বিদেশী সাহায্যের খুব
সামান্যই গরিব জনগণের কাছে
পৌঁছেছে। জিয়া
সৈনিক হিসেবে ১৯৬৫ সালে
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পারদর্শিতার
জন্য বিশেষভাবে পুরস্কৃত হন। ১৯৭১
সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত
নেন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে
মেজর পদে আসীন থাকার
সময় তিনিই ঐতিহাসিক রেডিও
ভাষণে বাংলাদেশকে স্বাধীন বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
দেন। বাংলাদেশ
স্বাধীন হওয়ার পর তিনি
সেনাবাহিনীতে থেকে যান।
অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে
ছয় বছর আগে তিনি
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন। তার
সময়ে দেশ একটা শান্ত
সময় পার করে।
বিশ্বের অন্যতম সৈনিক রাষ্ট্রপ্রধান
হিসেবে তিনি সুখ্যাতি অর্জন
করেন। ১৯৭৮
সালে অবাধ এবং নিরপেক্ষ
হিসেবে গৃহীত এক নির্বাচনে
তিনি বিপুল ভোটাধিক্যে রাষ্ট্রপতি
নির্বাচিত হন।
তার কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
তাকে নির্মম চরিত্রের লোক
বলে আখ্যায়িত করে বলেছে, সম্প্রতি
তিনি পরিবর্তিত হয়েছেন। তিনি
অধিকাংশ রাজবন্দীকে মুক্তি দেন।
অতি সম্প্রতি শেখ মুজিবের কন্যা
শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যাবর্তনের অনুমোদন
দেন।
যদিও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রাসাদ যথেষ্ট জাঁকজমক ছিল;
তবুও সেখানে তিনি শুধু
অফিসের কাজকর্মই করতেন। স্ত্রী
এবং সন্তানদের নিয়ে যেখানে থাকতেন
সে বাসাটা সাদামাটা ধরনের।
“দ্য ওয়াশিংটন পোষ্ট” ৩১ মে ১৯৮১
Comments
Post a Comment